মো: রাশেদুল ইসলাম (রাশেদ)
বিশেষ প্রতিনিধি,
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা শহরে কাজ করা মানব কল্যান সংস্থা নামের একটি এনজিও হতদরিদ্র, অসহায় কয়েক শত গ্রাহকের সঞ্চয়ে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকেরা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে অসহায় গ্রাহকেরা টাকা হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী সুত্র জানায়, জীবননগর পৌর শহরের লক্ষীপুর মিলপাড়ায় জনৈক জামাল হোসেনের বাড়ী ভাড়া নিয়ে ‘মানব কল্যান সংস্থা” নামে একটি বেসরকারী এনজিও মাসখানেক আগে কাজ শুরু করে। সংস্থাটি শুরুতেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হতদরিদ্র, অসহায় মহিলাদের সংগঠিত করে সহজ কিস্তিতে ঋণ দেয়ার জন্য সমিতি গঠন করে। প্রতিটি সমিতিকে নেতৃত্ব দিতে সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে সভাপতি নির্বাচন করা হয়।
সংস্থার কথিত মাঠ কর্মিরা সদস্যদের নানা ভাবে সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে বলে প্রলোভন দিতে থাকে। বলা হয় যে সদস্য যত তাড়াতাড়ী যত বেশী সঞ্চয় জমা দিতে পারবে, তাকে তত তাড়তাড়ী মোটা অংকের ঋণ দেয়া হবে। সেই সাথে কুঠির শিল্পের উপর প্রশিক্ষনের পর তাদের পণ্য তৈরীর জন্য উপকরন, সেলাই মেশিন প্রদানসহ নানান সুযোগ সুবিধার কথা বলে তাদের নিকট থেকে সঞ্চয় আদায় করতে থাকে।প্রত্যেব সদস্যের নিকট থেকে পাঁচ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় আদায় করে। যে সব সদস্য পাঁচ হাজার টাকা জমা দিবে তারা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং যারা দশ হাজার চাকা সঞ্চয় জমা দিবেন তারা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। নানান সুবিধা আর স্বল্প সময়ে কোন ঝুামেলা ছাড়াই মোটা অংকের ঋণ পাওয়ার আশায় অনেক সদস্য হাঁস-মুরগী বিক্রি করে সঞ্চয় জমা দেন।
উপজেলার কন্দর্পপু্ুর গ্রামের হোসেনের স্ত্রী অন্তরা খাতুন সাত হাজার, জিয়ারুলের স্ত্রী নাসিমা বেগম ১০ হাজার এবং আব্দুর রশিদের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন ১০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় জমা দিয়েছেন। তারা বলেন মানব কল্যান সংস্থার ম্যানেজার ও মাঠকর্মি পরিচয়ে আমাদের গ্রামে আমাদেরকে মোটা অংকের টাকা ঋণ দেয়ার কথা বললে আমরা তাদের কথায় বিশ্বাস করি এবং আমরাসহ আমাদের গ্রাসের অনেক মহিলার নিকট থেকে সর্ব নিম্ন সাড়ে তিন হাজার এবং দশ হাজার টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় আদায় করে। কিন্তু পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ে তারা আমাদেরকে ঋণ না দিয়ে নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করতে থাকে।
সর্বশেষ সংস্থার কর্মকর্তারা আমাদেরকে বুধবার ঋণ দেয়ার কথা বলে। আমরা দুপুরের দিকে এনজিও অফিসে গে্লে দেখি যে অফিসে তালা দেওয়া এবং লোকজন নেই। অফিসের ম্যানেজারের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তা আর রিসিভ হয়না। পরে আরো অনেক গ্রাম থেকে গ্রাহকেরা অফিসের সামনে এসে ভিড় করে।
এদিকে উপজেলার গোয়ালপাড়ার ভ্যান চালক মিনারুল ইসলাম বলেন, সংস্থাটি আমার স্ত্রীসহ গ্রামের বহু মহিলার নিকট থেকে সঞ্চয় আদায় করেছে। আমাদের আশেপাশের গ্রামের মানু্ষদের নিকট থেকে সঞ্চয় করলেও ঋণ না দিয়ে অফিসের সমস্ত লোকজন উধাও হয়ে যায়।
এলাকাবাসীর ধারণা সংস্থাটির লোকজন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মহিলাকে ঋণ দেয়ার নামে কোটি টাকার সঞ্চয় আদায় তা নিয়ে পালিয়েছে। তবে যিনি একটি ভুয়া এনজিও’র নিকট ঘর ভাড়া দিয়ে প্রতারনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেন, তারাও গ্রাহকের চোখে অপরাধি। আমরা এনজিও কর্তৃপক্ষের পা্শাপাশি ঘর মালিককেরও শাস্তি কামনা করছি।
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আব্দুস সামাদ বলেন, সংস্থার সদস্যরা আমাদের গ্রাম থেকে লক্ষাধিক টাকার সঞ্চয় হাতিয়ে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার ব্যাপারে দুইটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত পুর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।